কোরআনের মতন বই লেখা সম্ভব নয় কেন?
কোরআন আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। এই কথাটি কোরআনই লেখা আছে। বেশি দূর যেতে হবে না। একেবারে প্রথম পৃষ্ঠাতে ২৩ নম্বর লাইন।
আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার অনুরূপ কোন সূরা আনয়ন কর, এবং তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সকল সাক্ষী (সহযোগী) কে আহবান কর। (সূরা বাকারা - ২৩)
এই ব্যাপারে নাস্তিকদের একটি পাল্টা যুক্তি থাকে - একজন কি আরেকজনের মতন লিখতে পারে নাকি? আপনি রবীন্দ্রনাথের মতন লিখে দেখান তো।
সেই যুক্তির উত্তর দেবার জন্যই এই লেখাটি…
আরেকজনের মতন লেখা সবসময়ই সম্ভব। মানব ইতিহাসে বারবার মানুষ আরেকজনের মতন লিখেছে। আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন, তখনও দুনিয়ার কোথাও কোন একজন লেখক আরেকজনের মতন লিখছে।
কানাডার বিখ্যাত গায়ক Bryan Adams এর গান Summer of 69। গানটিতে কৈশোরের স্মৃতিচারণ করে বলেছে, তাদের একটি ব্যান্ড ছিল। সেই ব্যান্ডের অমুক তমুক সদস্য ছিলো। এত বছর পরে, সেই ব্যান্ড সদস্যরা এখন ওখানে, সেখানে আছে। ভারতের গায়ক ভুপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান "কফি হাউসের আড্ডাটা আজ আর নেই"। কফি হাইজে আড্ডা দেওয়া সেই লোকজনগুলো এত বছর পরে, ওখানে, সেখানে আছে, ইত্যাদি। এই দুইটি গান একই ধরণের হয়েছে। একজন লেখক, আরেকজনের মতন লিখেছে।
রবীন্দ্রনাথ এর "যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই মাঠে" গান। জীবনানন্দ দাসের "আবার আসিব ফিরে" কবিতা। ওই গানে ও কবিতায়, বারবার জন্ম নিয়ে বাংলার প্রকৃতির মাঝে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা বোঝানো হয়েছে। কোলকাতার গায়ক সুমন এর "জাতিশ্বর" গানে, বারবার জন্ম নিয়ে একই নারীর প্রেমিক হতে চেয়েছে। সুমন নিজেই গান লেখেন। রবীন্দ্রনাথ এর মতন লেখা যায়।
মহাভারত, রামায়ণ ইত্যাদি গল্প পড়ে ইরানের এক রাজার মনে হয়েছিলো মুসলমানদের জন্য তেমন ধরণের গল্প থাকলে ভালো হতো। তাই, তিনি একজন লেখককে টাকা দিয়ে, তেমন উপন্যাস লিখিয়েছিলেন। সেই উপন্যাসটি আপনারা "আরব্য রজণী" উপন্যাস নামে চেনেন। একজন মানুষ আরেকজনের মতন লিখতে পারে।
বলিউড এর 1942 A love story সিনেমার "Ek larki ko dekha" গানে, একটি মেয়ের কথা বলেছে। মেয়েটিকে দেখলে এমন লাগে, তেমন লাগে, ইত্যাদি বারবার বলেছে। বাংলাদেশের গায়ক মাকসুদ এর "মনে পড়ে" গানটিতে, একজন মেয়ের কথা বলা হয়েছে। সেই মেয়েটিকে অমুক সময় মনে পড়ে, তমুক সময় মনে পড়ে, এমন বারবার বলা হয়েছে। একজন মানুষ আরেকজনের মতন লিখছে।
বাংলাদেশের কবি শামসুর রহমান এর "স্বাধীনতা তুমি" কবিতা অনুকরণ করে, গত ৫০ বছরে অন্তত কয়েক হাজার কবিতা লেখা হয়েছে। আমি নিজেও স্কুলে পড়ার সময়, তেমনি একটি কবিতা লিখেছিলাম।
বিদ্রোহী কবি নজরুলের লেখাকে অনেক আগে থেকেই ব্রিটিশ কবি Byron এর লেখার সাথে তুলনা করা হয়। এমনকি আমার মতন একজন তুচ্ছ লেখককে, Quora বাংলার কয়েকজন পাঠক "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" এর লেখক আরিফ আজাদ এর সাথে তুলনা করেছে।
একজন মানুষ আরেকজনের মতন লিখতে পারে। সেটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। এমন ঘটনা সবসময়ই ঘটে।
কোরআনের কোন বৈশিষ্ট্য আছে, যার কারণে মানুষ কোরআনের মতন বই লিখতে পারে না? সেই বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গেলে মুসলমানরা মুখস্ত কয়েকটি কথা বলে।
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের আগেই অমুক বিষয় কোরআন দেওয়া আছে।
কোরআনে অনেক গাণিতিক মিল আছে
এগুলোর কোনটাই মুল বিশিষ্ট নয়। কোরআনের মুল বিশিষ্ট হলো - বাচনভঙ্গি। আপনাকে তিনটি চিঠি থেকে কয়েকটি লাইন পড়ে শোনালে, আপনি খুব সহজেই বলতে পারবেন, কোনটা বাবার চিঠি কোনটা, কোনটা প্রেমিকার চিঠি, কোনটা বন্ধুর চিঠি। ওই লাইনগুলোর মধ্যে নাম পরিচয় না থাকলেও সঠিকভাবে বলতে পারবেন। তার কারন - বাচনভঙ্গি। চিঠির ভাষা দেখেই বাবার চিঠি আর বন্ধুর চিঠির পার্থক্য বোঝা যায়।
লোকজন নিজে কোরআন পড়ে না। অন্যের কাছ থেকে দুই এক লাইন শুনে, আন্দাজে একটা ধারনা করে নেয়। নিজে মাত্র কয়েকটা পৃষ্ঠা পড়লেই কোরআনের বাচনভঙ্গি বুঝতে পারতো। কোরআনের ভাষা (বাচনভঙ্গি) খেয়াল করলেই বোঝা যায়, এই কথাগুলো যার কাছ থেকে এসেছে, তার চেয়ে ক্ষমতাবান আর কেউ নেই। বোঝা যায়, এই কথাগুলো সর্বশক্তিমানের কাছ থেকে এসেছে।
কোরআনের মতন লিখতে না পারার একটা বড় কারন এটি। আল্লাহর মতন ক্ষমতাবান কেউ নেই। যেই লিখুক না কেন, সেই লেখার ভেতরে কোরআনের মতন ক্ষমতা দেখা যাবে না। এজন্যই কোরআনের মতন হবে না।
একটা যন্ত্র বানাবেন। সেই যন্ত্রটি বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নিবে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করবে। সেই যন্ত্রটি কত ছোট বানানো যায়? বিজ্ঞানের এই স্বর্ণ যুগেও সেই যন্ত্রটি একটি টেনিস বলের মতন ছোট বানানো যাবে না। এমন একটি যন্ত্র ব্যাটারি ছাড়া কিভাবে চালানো যাবে? সকল স্তন্যপায়ী প্রানীর দেহে তেমন যন্ত্র আছে - ফুসফুস। যেটা ব্যাটারী ছাড়া চলে। শুধু তাই নয়। সেই যন্ত্র তজবির দানার চেয়েও ছোট আছে। ইদুর ছানার ফুসফুস কত বড়?
আল্লাহর দেওয়া জিনিস এমনই হয়। কোরআনে হলো আল্লাহর দেওয়া জিনিস। তেমন কোন জিনিস বানানো অসম্ভব।